সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

স্টেশন মাস্টার ভুতের গল্প।বাংলা ভূতের কাহানি।


 রাজবাড়ীর সাথে কুষ্টিয়ার  রেল লাইনের কাজ দ্রুত চলছিল। কাজের সমস্ত দায়িত্ব পেয়েছিল শমসের নামে এক খিট খিটে এক বুড়ো কন্টাক্টার। রেল লাইনর কাজ শুরু হবার কিছু দিনের মাথায় একটা অঘটন ঘটে যায় । গুদাম ঘর থেকে একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। যার সমস্ত দায়ভার গিয়ে পরে দাড়োয়ান সেলিমের উপর। কিন্তু বেচারা সেলিম একেবারেই সাদামাতা লোকছিল।শুধু পাহাড়া দেবার সময়  ঘুমিয়ে পড়ার বদ অভ্যাস ছিল। তাই সে এই অভিযোগ জোড় গলায় অস্বীকার করতে পারলনা। বাইরে প্রচণ্ড শীত পরেছে। রেল লাইনের লোহা আর ইস্পাত এই ঠান্ডাকে যেন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।সেলিম ঘুম চোখে চেয়ে বাইরে দেখছে। কিন্তু কুয়াশার কারণে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। তার মনে হচ্ছে চাদড়টা কে আরেকটু জড়িয়ে চেয়ারে গা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়েতে। কিন্তু কন্টাক্টার শমসেরের  ভয়ে তা সম্ভব না। সেলিমের কোন ভিটে মাটি নেই, এখান থেকে চাকুরী চলে গেলে কোথায় থাকবে সে কি করে খাবে?মিছে অপবাদে এমনিতেই তার চাকুরীর অবস্থা টলমলে। এভাবে নানা কথা ভাবতে ভাবতে সেলিমের চোখ থেকে ঘুম চলে গেল।

অনেকক্ষণ এভাবেই কেটানোর পড়। সেলিমের আলসে চোখদুটি ঘুমিয়ে পড়তে প্রস্তুত, ঠিক সেই সময়েই খুব কাছ থেকেই শব্দ পেল সেলিম। ঘুম কাতুরে চোখদুটি চারদিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল।হাল্কা আলোয় বাইরে আবছা যা দেখা যাচ্ছে তাতে সব কিছুকেই সেলিমের কাছে ভূত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু সে জীবন্ত কিছুর পায়ের আওয়াজ পেয়েছে।যেহেতু বাতাস নেই তাই কোন কিছু নড়বার সুযোগ নেই। সেলিম শব্দের দিকে চেয়ে থাকল। কিন্তু ঠিক বিপরীত দিক থেকে সে আবার আওয়াজ পেল, এবার সে নড়ে চড়ে বসল। পেছনে ফিরে চাইল। দেখল কালো মত কিছু একটা সরে গেল, কিন্তু কী তা বুঝলো না। বেশ কিছুক্ষণ সে সেই দিকে চেয়ে থাকল, এক সময় সে আন্দাজ করতে পারল, আসলে তার সামনে কোন কিছুর অস্তিত্ত নেই, তার কানের পাশে সে ঠান্ডা কোন কিছুর অস্তিত্ত পেল। ঝট করে ঘুরল, ঘুরেই দেখে কালো পোষাক পরা কোন কিছু তার সামনে দাঁড়িয়ে। মূহুর্তের মধ্যেই লাইটটি ধপ করে নিভে গেল। সেলিম শুধু দেখতে পেল তার চোখের সামনে কেউ তার পাঁচ আঙ্গুল মেলে ধরে আছে। সে চিৎকার করতে গিয়েও করতে পারছেননা।গত কাল সন্ধ্যে পর্যন্ত যেখানে চুরির মামলায় সকলেই ব্যস্ত ছিল আজ সেখানে সেলিম সেলিম করে সবাই ব্যস্ত।লোকেরা কেউ ওর কোন লাশেরও সন্ধান  পাচ্ছেনা। স্টেশন মাস্টার রাতুল রাত ১টা বাজেও  সেলিমকে দেখেছে। তারপরে আর কেউ তাকে দেখেনি। সারাদিন অপেক্ষার পর কন্টাক্টার শমসের দেখতে এল। এসেই রাতুলের দিকে আড় চোখে বারবার চাইতে লাগল। কিন্তু লাশ না পাওয়া যাওয়ায় কাউকেই খুনের দায়ে দোষারোপ করতে পারছেনা।সেলিম মরেছে কিনা তাও কেউ জানেনা। শমসেরের ভাব ভঙ্গিতে রাতুল বুঝে গেছে কোন মতে যদি সেলিমের  লাশ পাওয়া যায় তাহলে খুনের দায় তার ওপরেই পরবে। এদিকে রাত বাড়ার আগেই শমসের  গুদামঘর ও এর আশে পাশে পাহাড়া বসিয়ে দিল।তিন দিনের মাথায় সেলিমের গল্প বলা সকলে বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ এবার কাহিনীর মোড় নিয়েছে অন্য দিকে। গত দুই দিন থেকেই রাতের বেলায় গ্রামের অনেকেই দেখেছে কেউ লাইট হাতে করে ঠিক সেলিমের মত করেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।সেলিমের সমাজ থেকে বলা হচ্ছে এটা সেলিমের অতৃপ্ত আত্মা। অন্যরা তা শুনে দিনের বেলায় মুচকি হেসে রাতে খুব তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করছে। এইদিকে রাতুলের কারো কথায় কান দেবার সময় নেই। আজই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ এসেছিল। তারা তাকেই সন্ধেহ করছে। সে জন্য যেভাবেই হোক সেলিমকে জীবিত কিংবা মৃত পেতে হবে। জীবিত পেলে বুড়োকে এক হাত নেয়া যাবে আর মৃত পেলে লাশ গুম করতে হবে। রাত ২টা

বাইরে কেউ ফুপিয়ে কাঁদছে। ভূতুরে মেয়ে কান্না নয় সেটা। গম্ভীর গলার নাকি সুর।রাতুলের সমস্ত শরীরের লোম দাঁড়িয়ে তার ভয়ের জানান দিচ্ছে। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে কেউ কাঁদছে। কিন্তু কে কাঁদছে তা বের হয়ে দেখার সাহস হচ্ছেনা। ভয় কাটাতেই রাতুল হাড়িকেনের আলো বাড়াতে টেবিলের উপরে হাত দিল। অসাবধানতা বশত টেবিলের উপরে তালার চাবির উপরে হাত পরল। সেটি রাতের নিস্তব্ধতাকে কাটিয়ে ঝনঝন আওয়াজ করে মাটিতে আছড়ে পরল। সাথে সাথেই বাইরের কান্নার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। কারো ধুপ করে মাটিতে পরে যাবার আওয়াজ আসল। রাতুল কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা। কিছুক্ষন সময় নিয়ে সে সিদ্ধান্ত নিল বাইরে বের হবে। হাড়িকেনের আলো বাড়িয়ে দিয়ে সে বাইরে বের হয়ে এল। বাইরে শুধু কুয়াশা দেখতে পেল। কেউ নেই। ভয় পেল এই ভেবে কে এতক্ষণ কাঁদছিল? কিছুক্ষণ পরেই রাতুল কারো হেঁটে যাবার আওয়াজ পেল। স্বভাবতই হাড়িকেনটা সে আওয়াজের দিকে ধরল। আবছা আলোয় চাদড় পরিহিত অবস্থায় কাউকে সে দেখল। মনে পরে গেল গ্রামবাসীর কথা। আবার ভাবল সে কেন তার কোন ক্ষতি করছেনা? এই সাহস নিয়েই চাদড় পরা লন্ঠন ধারির পিছু নিল। বাইরে ফাঁকা জায়গায় এসে সেতিকে দেখে তার সেলিমকেই মনে হল। কারন চাদর আর হাড়িকেন দুটিকেই তার সেলিমের মনে হল। পাচ বছর ধরে এক সাথে আছে তারা। রাতুল সাহস করে ডাকল, এ্যাই সেলিম। কিন্তু সেটা পিছনে ফিরে তাকালো না। আগের গতিতেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাতুল এই লণ্ঠনধারীর পেছনে আসতে আসতে গোরস্থান পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু সেটা আর থামছে না। এবার রাতুল পুরো ভয় পেয়ে গেল। ওটার সাথে গোরস্থানের ভেতরে ঢুকবার সাহস পেলনা। ঠায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কী করবে তা ভাবল। তারপর স্টেশনে ফিরে আসতে লাগল।

ষ্টেশনের খুব কাছা কাছি আসার পর রাতুল বুঝতে পারল কেউ তার পিছু নিয়েছে। তাই সে একটি রেলগাড়ির বগির আড়াল হল। আরো কাছাকাছি কারো আওয়াজ পাওয়াতে সে ভয় পেয়ে বগির ভেতরেই ঢুকে গেল। ভেতরে আসতেই দম বন্ধ হবার যোগাড়। সে হাড়িকেন উচিয়ে চারদিকে তাকাতেই সেলিমের চাদড়টি দেখতে পেল। সামনে এক কদম আগাতেই পিচ্ছিল কোন কিছু উপরে পা পড়তেই ধরাম করে নরম কিছুর উপর গিয়ে পড়ল রাতুল। তার শরীরের নিচে নরম কি আছে তা দেখতে যেয়েই দেখল তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সাদা চেহারার প্রায় রক্তিম লাল দুটি চোখ যেন ঠিকরে বেরুচ্ছে। আর সেটির হাত তার ঘাড়ের উপরে।রাত পার হয়ে সকাল হল। রাতুল অবচেতন ভাবে সেই পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতেই পরে রইল। যখন চেতন পেল নিজেকে একটি মরা লাশের উপর আবিষ্কার করল। মাথার উপরে এমন আঘাতের পর বেঁচে আছে তাতেই সে আশ্চর্য

Post a Comment

0 Comments